শিল্প বিপ্লব ১৮ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটেনে শুরু হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করে। এটি মূলত টেক্সটাইল শিল্পে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, যেমন স্পিনিং জেনি এবং তুলার জিন, যা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে দ্রুততর এবং আরও কার্যকর করে তোলে। এই বিপ্লবের প্রভাব ছিল ব্যাপক, যা শুধুমাত্র উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনই নয়, বরং শ্রম বিভাজন, শহুরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি, এবং সামাজিক অসাম্যও সৃষ্টি করেছিল।
শিল্প বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল
কারণ:
1. টেক্সটাইল শিল্পের উদ্ভাবন:
-
1760-এর দশকে ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল, বিশেষ করে টেক্সটাইল শিল্পে। জেমস হারগ্রিভসের স্পিনিং জেনি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ছিল, যা একসঙ্গে আটটি থ্রেড ঘোরাতে সক্ষম ছিল। এর ফলে কাপড় উৎপাদন দ্রুত এবং সহজ হয়ে যায়।
2. স্পিনিং জেনির আবিষ্কার:
-
1764 সালে জেমস হারগ্রিভস দ্বারা আবিষ্কৃত স্পিনিং জেনি কাপড়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। এটি আগে মানুষের হাতে কাপড় বোনার ধীর প্রক্রিয়ার বিপরীতে দ্রুত সুতা তৈরি করতে সাহায্য করেছিল, যা টেক্সটাইল শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছিল।
3. তুলা পরিষ্কারের প্রযুক্তি:
-
1793 সালে এলি হুইটনি তুলার জিন আবিষ্কার করেন, যা তুলা বাছাই করার পরে পরিষ্কার করতে সাহায্য করেছিল। এর ফলে তুলা প্রক্রিয়াকরণ অনেক দ্রুত হয়, এবং টেক্সটাইল শিল্প আরও উন্নত হয়।
4. বিনিময়যোগ্য অংশের ধারণা:
-
হুইটনি বিনিময়যোগ্য অংশের ধারণা নিয়ে আসেন, যেখানে মেশিন একাধিক অনুলিপি তৈরি করতে পারে, এবং যে কোনো কর্মী সেই অংশগুলো একত্রিত করতে পারে। এটি উৎপাদনকে দ্রুত এবং সহজ করে তোলে।
5. বাষ্পশক্তির ব্যবহার:
-
শিল্প বিপ্লবের আরেকটি মূল পরিবর্তন ছিল বাষ্পশক্তি এবং অন্যান্য শক্তির ব্যবহারের প্রসার। মেশিন এবং কারখানার কার্যক্রম মানুষ এবং প্রাণীর পেশির পরিবর্তে বাষ্পের মাধ্যমে চালিত হতে শুরু করে।
6. কারখানা ব্যবস্থা:
-
শিল্প বিপ্লবের সময় নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, যা বড় প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ঘনীভূত করে। কারখানা ব্যবস্থার মাধ্যমে যান্ত্রিকীকরণের ফলে কাপড় বুনন এবং অন্যান্য উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং কার্যকর হয়েছিল।
ফলাফল:
1. অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন:
-
শিল্প বিপ্লবের ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। উৎপাদন বাড়ায় পণ্য সস্তায় তৈরি এবং বিক্রি করা সম্ভব হয়, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৃদ্ধি ঘটায়।
2. শ্রম বিভাজন:
-
কারখানা ব্যবস্থার ফলে শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্র ভেঙে কাজ করার প্রয়োজন হয়েছিল। এতে ব্যবস্থাপনাগত শ্রেণিবিন্যাসের উদ্ভব ঘটে, যেখানে কাজগুলি নির্দিষ্ট কর্মীদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল।
3. শহরে জনসংখ্যার চাপ:
-
শিল্প বিপ্লবের ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে আসতে শুরু করে। এর ফলে শহরগুলি জনাকীর্ণ ও নোংরা হয়ে যায়, যা জনস্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।
4. উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মূল্য হ্রাস:
-
মেশিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। পণ্য সস্তায় তৈরি হওয়ায় কারখানার মালিকরা ধনী হয়ে ওঠে, এবং ক্রেতারা সস্তায় পণ্য কিনতে পারে।
5. কঠোর শ্রম পরিস্থিতি:
-
কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারা কম বেতন পেত, এবং কাজ ছিল বিপজ্জনক। পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা সপ্তাহে ছয় দিন, প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করত, যা অত্যন্ত কঠোর ছিল।